আমাদের দেশের মূল সমস্যাঃ
১। আইনের শাসনের অভাবঃ আইন সবার জন্য সমান এই কথা সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে নাই। আপনার কি মনে হয় আওয়ামী লীগ চলে গেছে এখন নতুন সরকার গঠন হলেই কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে?
২। ঘুষ-দূর্নীতিঃ দেশের বড় একটা জায়গা দখল করে আছে ঘুষ-দূর্নীতি। আপনার কি মনে হয় আওয়ামী লীগ চলে গেছে এখন সব বন্ধ হয়ে যাবে? নাকি নতুন সরকার আসলে এটা ঠিক হয়ে যাবে? নাকি কিছু নতুন মুখ প্রশাসনে এই সব জায়গায় গেলেই ঠিক হয়ে যাবে?
৩। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার দাপটঃ রাজনৈতিক নেতাদের দাপট কি এখন কমে যাবে? আপনাদের কি ধারণা আপনারা দেশ স্বাধীন করলেন আর স্বাভাবিকভাবেই নেতাদের ক্ষমতার দাপট কমে গেলো। নতুন যে সরকার আসবে তার দাপট কি আপনারা গ্রহণ করবেন? বর্তমানে সাধারণ যে শিক্ষার্থীরা দেশ স্বাধীন করলো তারাই বিপদে পড়া শুরু করেছে, এখনই আর কেউ দাম দেয়না। আরো অনেক দিন পরেই আছে।এখানে যার যত জনবল তার তত ক্ষমতার দাপট। সাধারণ শিক্ষার্থী কখনও এক সাথে হতেও পারবে না, তারা দামও পাবে না।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতিঃ আপনাদের কি ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় রাজনীতি কি এখন বন্ধ হয়ে যাবে? নাকি নতুন কোন সরকার আসলে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।
সমালোচনাঃ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সত্যিই আমি আশা দেখছিলাম নতুন একটা সুন্দর দেশ হবে। তবে যদি এইবার আমরা সেটা গঠন করতে না পারি, তাহলে এই দেশ আর কোন দিন সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না । আবার সেই একই শাসন ব্যবস্থার মধ্যে দিনে দিনে ধাবিত হবে। আমাদের সবার উচিৎ ছিল এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে আমরা একবারে দেশটাকে সুন্দরভাবে গঠন করতে পারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি এমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করলাম না। আপনারা যে রূপরেখার কথা বলছেন এটা দিয়ে শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হবে কিন্তু আবার সেই একই পথেই যাবে বাংলাদেশ।
সমাধানঃ যদিও সমাধান অনেক কঠিন, তবে আমার ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে মনে হয় সমাধান করা যাবে। তবে যদি ভুল মনে হয় ক্ষমা করে দিবেন।
প্রথমে প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রের জন্য নতুন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে “রাষ্ট্র মনিটরিং ইউনিট”। এটার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে থাকবে না। দেশের সুশীল সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এমনকি প্রয়োজন হলে দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহীদের তালিকা প্রকাশ হবে এবং নাম্বার ভেরিফিকেশন দিয়েও ভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। একটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখানে অভিযোগ সিস্টেম চালু থাকবে রাষ্ট্রের নেতাদের ক্ষমতার দাপট, ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি হবে।
তবে এটা অটোমেটিক সিস্টেম থাকবে যারা ভুক্তভোগী হবে তারা অভিযোগ দিবে, যার বিরুদ্ধে ২০+ অভিযোগ যুক্ত হবে তার বিষয়ে সরকারি সংস্থা তদন্ত শুরু করবে। ২৫+ অভিযোগ জমা হলে মিডিয়া তদন্ত শুরু করবে। ৩০+ অভিযোগ জমা হলে তার নাম+ সকল তথ্য সাইটে প্রকাশ হবে অটোমেটিক। এখানে যারা অভিযোগ দিবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। তবে যারা অভিযোগ দিবে তাদের মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই হবে। কোন জটিল পরিস্থিতি না হলে সেই নাম্বার দেখতে পারবে না। আর যখন কারো বিরুদ্ধে ৫০+ অভিযোগ জমা হবে তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজ হবে সেই বিষয়ে সমালোচনা করা এবং বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া। সপ্তাহে একদিন আমরা দেশ গড়তে সময় দিলাম।
আমি আশা করি এভাবে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি তাহলে নতুন রাষ্ট্র দেখবো, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, ঘুষ-দূর্নীতি করার আগে ১০০ বার ভাববে, আর নেতাদের ক্ষমতার দাপট ও কমিয়ে যাবে। যারা রাজনৈতিক নেতা হবে তাদের কাজ শুধু আমাদের সার্ভিস দেওয়া, বাহিনী গঠন করে আমাদের উপর ক্ষমতার দাপট দেখানো না।
দ্রুত যদি এমন কোন পদক্ষেপ না নিতে পারেন, তাহলে আবার সেই আগের অবস্থায় দেশ চলে যাবে। নেতাদের লুটপাট শুরু হয়েছে, আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়েছে, নেতাদের বাহিনী তৈরি হয়েছে ছাত্রদের কাজ শেষ হয়েছে এখন আর দাম নাই, সব কিছু চালু হলেই ঘুষ-দূর্নীতি শুরু হবে। আগে ছিল আওয়ামী লীগ এখন খাবে অন্য কেউ। তাই এখনই একটা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান দরকার যা জনগণের জন্য কথা বলবে, তার বিরুদ্ধে সরকার কথা বলতে পারবে না। প্রয়োজন হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে এই রকম একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ।
সর্বশেষঃ এই আন্দোলনে হয়তো অন্য সবার মত আমাদের অধিক অবদান ছিল না, অনলাইনে এবং জেলা শহরে যেটুকু পেরেছি আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। তবে সত্যি বলতে আমরা নতুন একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেছিলাম। তবে মনে হচ্ছে সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হলো না। আমার কাছে মনে হচ্ছে এতো মানুষের জীবন দিয়ে কোন লাভ হলো না। সেই আগের মত অবস্থায় ফিরিয়ে যাবো আমরা, যেমন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আমরা ভাবছিলাম আমরা স্বাধীন, এখন আওয়ামী লীগের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভাবছি আমরা স্বাধীন, যত দিন যাবে আবার সেই আগের রূপে ফিরবে দেশ। তাই আবারও বলছি এখনই সময় এমন একটা ব্যবস্থা করা যা দূর্নীতিবাজদের রাতের ঘুম হারাম করবে।
বিশেষ অনুরোধঃ সকল শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। আপনারা এখন ভাবছেন কিন্তু আপনাদের ভাবা উচিৎ আগামীর ভবিষ্যৎ ।
তবে আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে বা ভুল মনে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
লিখেছেনঃ মোঃ এনামুল হক